আমার কথা
অনুলিখন – অনিন্দিতা চক্রবর্তী
আমি রেমো । আমার আরেকটা নাম আছে
- সৌরদীপ । তবে সবাই আমায় রেমো বলেই ডাকতে পছন্দ করে ।আমি রাজপুরে থাকি । মা-বাবা,
ঠাকুমা,
মনু দাদু এদের নিয়ে আমার পরিবার ।
আমি এবার আমার নিজের সম্বন্ধে কিছু কথা বলব । জন্ম থেকেই আমি শুনতে পাই না । মা বলে,
আমার যখন ১১ মাস বয়স তখন জানতে পেরেছিল এই অসুবিধার কথা । বাবা-মা আমার এই অসুবিধাকে মেনে নিয়ে আমাকে কিভাবে কথা বলা ও ভাষা শেখানো যায় তার জন্য বিভিন্ন জায়গায় সাহায্যের জন্য যায়। আমার যখন
প্রায় দু বছর বয়স তখন থেকে কানে মেশিন পরি । সেই সময় আমি ব্যান্ডেলে প্রতিবন্ধী
কল্যান কেন্দ্র (পি.কে.কে) তে যাই । ওখানের দিদি –দাদাদের সাহায্যে ধীরে ধীরে আমি
কথা বলতে শিখি । নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণ স্কুলে পরা-লেখা শুরু করি । চার বছর বয়স
থেকে ছবি আঁকার প্রতি আমার আগ্রহ তৈরি হয় । বিশেষ করে কার্টুন আঁকতে খুব ভালবাসতাম
। আমার এই আগ্রহকে আরও উৎসাহ দিত আমার মা । একদিন পড়াতে বসে আমার খাতার এক কোণে
একটা রেখা টেনেছিল আমি তৎক্ষণাৎ ওই রেখা থেকেই একটা ছবি এঁকে ফেলি । মা খুব অবাক
হয়ে আরও বিভিন্ন রকম রেখা টেনে নিয়ে দেখল আমি একই ভাবে নিমেষের মধ্যে সেগুলো থেকে
ছবি এঁকে ফেলছি । তারপর থেকে আমি যাতে আরও ছবি আঁকতে উৎসাহ পাই, মা আমায় সাহায্য
করে চলেছে । যত বড় হতে থাকি, আমার মধ্যে একটা ইচ্ছা তৈরি হতে থাকে – একজন বড়
শিল্পী হয়ে ওঠার ইচ্ছা ।
লক্ষ্যে পৌছনোর জন্য এগোতে লাগলাম কিন্তু যখন আমার বারো
বছর বয়স সব কিছু ওলট পালট হয়ে গেল । এমন একটা অসুখ আমার শরীরে দানা বাঁধল সেই থেকে আমার জীবন প্রায় থমকে গিয়েছে
। অসুখটার নাম মিনিয়ারস । ২০০৭ সাল থেকে প্রায় সব সময় বিছানায় শুয়ে থাকি । খুব
মাথা ঘোরে, হাঁটা চলা করতে পারি না ।বাবা-মা আমায় সুস্থ করে তোলার জন্য দেশের
বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করেও আজও আমি সুস্থ হয়ে উঠতে পারি নি । তবু আমার
স্বপ্ন দেখা থেমে থাকেনি । আর্ট কলেজে যেতেই হবে আমায়, তাই মুক্ত বিদ্যালয় থেকে
মাধ্যমিক পাস করার জন্য খুব চেষ্টা করছি । ছবি আঁকাও থেমে থাকে নি । যে সময় ভাল
থাকি, আমি ছবি আঁকি । রৌদ্র দাদা আমার গুরু । সে আমার ভুল গুলো ধরিয়ে দেয় আর আমার
মনি দাদুও আমায় সাহায্য করে । বাবা-মা সব সময় আমাকে মনের জোর দিয়ে চলেছে ।
অন্বেশার সবাই, আমার বন্ধুরা পাশে থেকে আমায় উৎসাহ দিয়ে চলেছে । পারতেই হবে আমাকে
। খুব ইচ্ছে করে আমার বন্ধুদের মত আমিও ছুটে বেড়াই , মন যা চায় তাই করি, কিন্তু
পারি না । হিয়ারিং এডও পরতে পারি না আর । কোন শব্দ আর শুনতে পাই না আমি । যখনই
স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই , তখনই আবার অসুস্থ হয়ে পড়ি । এরই মধ্যে “বিড়লা
একাডেমীতে” আর্টে ডিপ্লোমা কোর্সে ভরতি হয়েছি । কিন্তু শারীরিক কারণে নিয়মিত যেতে
পারি নি । এই অসুখটা পুরোপুরি সারে না আমি জানি । মা আমাকে সব বুঝিয়ে বলেছে ।
এই অসুবিধা গুলো সারাজীবন আমার সাথেই
থাকবে । তবুও আমি থেমে থাকব না । যা হবে দেখা যাবে । আমায় বড় শিল্পী হতেই হবে । সব
বাধা আমি অতিক্রম করতে পারবই । তোমরা সবাই আমার পাশে থাকো আমার স্বপ্ন পূরণ হবেই
হবে ।
সুত্র : অন্বেষণ ২০১৫