Thursday, September 20, 2018

Amar Katha: Souradip Chakraborty


আমার কথা
অনুলিখনঅনিন্দিতা চক্রবর্তী

আমি রেমো আমার আরেকটা নাম আছে -  সৌরদীপ তবে সবাই আমায় রেমো বলেই ডাকতে পছন্দ করে আমি রাজপুরে থাকি মা-বাবা, ঠাকুমা, মনু  দাদু এদের নিয়ে আমার পরিবার

আমি এবার আমার নিজের সম্বন্ধে কিছু কথা বলব জন্ম থেকেই আমি শুনতে পাই না মা বলে, আমার যখন ১১ মাস বয়স তখন জানতে পেরেছিল এই অসুবিধার কথা বাবা-মা আমার এই অসুবিধাকে মেনে নিয়ে আমাকে কিভাবে কথা বলা ভাষা শেখানো যায় তার জন্য বিভিন্ন জায়গায় সাহায্যের জন্য যায় আমার যখন প্রায় দু বছর বয়স তখন থেকে কানে মেশিন পরি । সেই সময় আমি ব্যান্ডেলে প্রতিবন্ধী কল্যান কেন্দ্র (পি.কে.কে) তে যাই । ওখানের দিদি –দাদাদের সাহায্যে ধীরে ধীরে আমি কথা বলতে শিখি । নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণ স্কুলে পরা-লেখা শুরু করি । চার বছর বয়স থেকে ছবি আঁকার প্রতি আমার আগ্রহ তৈরি হয় । বিশেষ করে কার্টুন আঁকতে খুব ভালবাসতাম । আমার এই আগ্রহকে আরও উৎসাহ দিত আমার মা । একদিন পড়াতে বসে আমার খাতার এক কোণে একটা রেখা টেনেছিল আমি তৎক্ষণাৎ ওই রেখা থেকেই একটা ছবি এঁকে ফেলি । মা খুব অবাক হয়ে আরও বিভিন্ন রকম রেখা টেনে নিয়ে দেখল আমি একই ভাবে নিমেষের মধ্যে সেগুলো থেকে ছবি এঁকে ফেলছি । তারপর থেকে আমি যাতে আরও ছবি আঁকতে উৎসাহ পাই, মা আমায় সাহায্য করে চলেছে । যত বড় হতে থাকি, আমার মধ্যে একটা ইচ্ছা তৈরি হতে থাকে – একজন বড় শিল্পী হয়ে ওঠার ইচ্ছা ।

লক্ষ্যে পৌছনোর জন্য এগোতে লাগলাম কিন্তু যখন আমার বারো বছর বয়স সব কিছু ওলট পালট হয়ে গেল এমন একটা অসুখ আমার শরীরে দানা বাঁধল সেই থেকে আমার জীবন প্রায় থমকে গিয়েছে । অসুখটার নাম মিনিয়ারস । ২০০৭ সাল থেকে প্রায় সব সময় বিছানায় শুয়ে থাকি । খুব মাথা ঘোরে, হাঁটা চলা করতে পারি না ।বাবা-মা আমায় সুস্থ করে তোলার জন্য দেশের বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করেও আজও আমি সুস্থ হয়ে উঠতে পারি নি । তবু আমার স্বপ্ন দেখা থেমে থাকেনি । আর্ট কলেজে যেতেই হবে আমায়, তাই মুক্ত বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করার জন্য খুব চেষ্টা করছি । ছবি আঁকাও থেমে থাকে নি । যে সময় ভাল থাকি, আমি ছবি আঁকি । রৌদ্র দাদা আমার গুরু । সে আমার ভুল গুলো ধরিয়ে দেয় আর আমার মনি দাদুও আমায় সাহায্য করে । বাবা-মা সব সময় আমাকে মনের জোর দিয়ে চলেছে । অন্বেশার সবাই, আমার বন্ধুরা পাশে থেকে আমায় উৎসাহ দিয়ে চলেছে । পারতেই হবে আমাকে । খুব ইচ্ছে করে আমার বন্ধুদের মত আমিও ছুটে বেড়াই , মন যা চায় তাই করি, কিন্তু পারি না । হিয়ারিং এডও পরতে পারি না আর । কোন শব্দ আর শুনতে পাই না আমি । যখনই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই , তখনই আবার অসুস্থ হয়ে পড়ি । এরই মধ্যে “বিড়লা একাডেমীতে” আর্টে ডিপ্লোমা কোর্সে ভরতি হয়েছি । কিন্তু শারীরিক কারণে নিয়মিত যেতে পারি নি । এই অসুখটা পুরোপুরি সারে না আমি জানি । মা আমাকে সব বুঝিয়ে বলেছে । এই  অসুবিধা গুলো সারাজীবন আমার সাথেই থাকবে । তবুও আমি থেমে থাকব না । যা হবে দেখা যাবে । আমায় বড় শিল্পী হতেই হবে । সব বাধা আমি অতিক্রম করতে পারবই । তোমরা সবাই আমার পাশে থাকো আমার স্বপ্ন পূরণ হবেই হবে ।

সুত্র : অন্বেষণ ২০১৫