Wednesday, October 2, 2019

কানের জোর কমছে? পরখ করে নিন অ্যাপেই, শলা স্বাস্থ্য দফতরের : এইসময় পত্রিকা



কানের জোর কমছে? পরখ করে নিন অ্যাপেই, শলা স্বাস্থ্য দফতরের


অনির্বাণ ঘোষ

পুজোর আমেজ কড়া নাড়ছে দরজায়। অথচ এই উৎসবের মরসুমেই মাত্রা ছাড়ায় শব্দদূষণ। নির্ধারিত ডেসিবেলের তোয়াক্কা না-করা দিনভর কানফাটানো মাইকের অত্যাচার সইতে হয় আমজনতাকে। শব্দ-দানবের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে হৃদযন্ত্রের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় হরমোন ও মানসিক স্বাস্থ্যও। যদিও এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব যে পড়ে শ্রবণক্ষমতায়, তা বিজ্ঞানে প্রমাণিত। এমনই সন্ধিক্ষণে একটি অ্যাপের সাহায্যে নিজের শ্রবণক্ষমতা নিজের স্মার্টফোনেই মেপে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচারও চালাচ্ছে স্বাস্থ্য ভবন।

বাজারচলতি হরেক অ্যাপের সন্ধান মেলে প্লে-স্টোর কিংবা অ্যাপ-স্টোরে। নিজের অডিয়োমেট্রির মাপতে সে সবের পক্ষে অবশ্য সওয়াল করছেন না স্বাস্থ্যকর্তা কিংবা চিকিৎসকরা। তাঁদের প্রেসক্রিপশন, ‘হিয়ারহু’ (hearWHO) নামের একটি অ্যাপ। কয়েক মাস আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এই হিয়ারিং অ্যাপটি চালু করেছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘হিয়ারহু অ্যাপটি ব্যবহার করে খুব ভালো শ্রবণক্ষমতা যাচাই করা যায় নিজে-নিজেই। বাজারচলতি অ্যাপের মতো এটি নয়।’ তাঁর আক্ষেপ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অ্যাপটি চালু করার পর তা নিয়ে জনমানসে খুব একটা সচেতনতা তৈরি হয়নি। ‘তাই জাতীয় বধিরতা নিবারণ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় এই সফটওয়্যার অ্যাপটি নিয়ে আমরা প্রচার শুরু করেছি। আজকাল প্রায় সকলেই স্মার্টফোন ব্যবহার করে। ফলে শোনার শক্তি প্রত্যাশিত স্তরে আছে না নেই, তা এই অ্যাপের সাহায্যে ঠাহর করা একেবারেই কঠিন নয়’--- মন্তব্য অধিকর্তার।

ইএনটি বিশেষজ্ঞ অর্জুন দাশগুপ্ত মনে করেন, অ্যাপটি যেহেতু বাজারে এনেছে হু, তাই এর বিজ্ঞানভিত্তি প্রশ্নাতীত। তিনি বলেন, ‘আমি নিজে অ্যাপটি ব্যবহার করেছি। আমার রোগীদেরও এই অ্যাপ ব্যবহার করার পরামর্শ দিই নিয়মিত। বধিরতা তো অনেক পরের স্তর। প্রাথমিক ভাবে শ্রবণক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে কি পাচ্ছে না, তা বোঝার জন্য অ্যাপটি সত্যিই খুব কার্যকর।’ তিনি মনে করেন, উৎসবের মরসুমে এই অ্যাপটি নিয়ে যে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়াস অত্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ। কেননা, লাগাতার উঁচু ডেসিবেলের শব্দ কান, হৃদযন্ত্র, রক্তচাপ, মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে যাঁদের কানে আগে থেকেই ছোটখাটো সমস্যা আছে, তাঁদের কান ও শ্রবণক্ষমতার দ্রুত অবনতি ঘটে শব্দ দূষণের জেরে।

আর এক ইএনটি বিশেষজ্ঞ সুবীর হালদারের কথায়, ‘৮০ ডেসিবেল বা তার কাছাকাছি মাত্রার শব্দ আমরা ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সয়ে নিতে পারি৷ কিন্তু তার বেশি সময় ধরে সেই শব্দ কানে ঢুকলে মুশকিল৷ অনিদ্রা থেকে স্মৃতিভ্রংশ, এমনকি মনোযোগেরও বারোটা বাজার আশঙ্কা ষোলো আনা৷’ কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ যদিও বেঁধে দিয়েছে শব্দমাত্রা। সেইমতো দিনে ও রাতে যথাক্রমে নিঃশব্দ এলাকায় ৫০ ও ৪০ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকায় ৫৫ ও ৪৫ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় ৬৬ ও ৫৫ ডেসিবেল এবং শিল্পাঞ্চলে ৭৫ ও ৭০ ডেসিবেল সর্বোচ্চ শব্দমাত্রা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, তার চেয়ে ঢের বেশি শব্দের অত্যাচার সইতে হয় কলকাতাকে।

কয়েক বছর আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের করা একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শব্দের নিরিখে বিপদসীমার অনেকটা উপরে দিন কাটানোকে এ শহর প্রায় অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে৷

ওই সমীক্ষা বলছে, শ্যামবাজার, গড়িয়া, টালিগঞ্জ, পার্ক সার্কাসের মতো এমন ২৬টি জায়গা, যেগুলির চরিত্র বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকার মিশ্রণ, সেখানে দিনের ব্যস্ততম সময়ে গড়ে ৭৯.৭৮ ডেসিবেল শব্দ উৎপন্ন হয়ে চলেছে৷ অন্য সময়ে সেই শব্দের প্রাবল্যও ৭৭.৮৮ ডেসিবেল যা পর্ষদের বেঁধে দেওয়া শব্দমাত্রার চেয়ে অনেকটাই বেশি৷ তাই চিকিৎসকরা বলছেন, কলকাতা ক্রমেই বধিরতার দিকে ধেয়ে চলেছে, সন্দেহ নেই। অ্যাপের সাহায্যে তার প্রাথমিক লক্ষণ যত আগে বুঝে নেওয়া যায়, ততই ভালো।

হাইলাইটস
  • পুজোর আমেজ কড়া নাড়ছে দরজায়। অথচ এই উৎসবের মরসুমেই মাত্রা ছাড়ায় শব্দদূষণ।
  • নির্ধারিত ডেসিবেলের তোয়াক্কা না-করা দিনভর কানফাটানো মাইকের অত্যাচার সইতে হয় আমজনতাকে।
  • শব্দ-দানবের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে হৃদযন্ত্রের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় হরমোন ও মানসিক স্বাস্থ্যও।
  • যদিও এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব যে পড়ে শ্রবণক্ষমতায়, তা বিজ্ঞানে প্রমাণিত।

No comments:

Post a Comment