নামের সার্থকতা
দেবাশীষ রায়
"অণ্বেষা" নামের মধ্যে এক জাদু লুকিয়ে আছে। যতই দেখছি আর যতই শুনছি , মনে হচ্ছে যেন অনেক কিছু এখনও অজানা রয়ে গেল। ভোরের আলো যেমন রাতের অন্ধকারের গ্লানি ভুলিয়ে দিয়ে নতুন করে উদ্ভাসিত আলোকে মনের প্রফুল্লতা আনে , অণ্বেষার অন্বেষণ ঠিক তেমনই নতুন করে বাঁচার পথ দেখায়।
চার পাঁচ জন মা পরস্পরের হাত ধরে তাদের বধির শিশুদের নিয়ে ছয় বছর আগে শুরু করেছিলেন যে যাত্রা, সে যাত্রায় ছিল অনেক ক্লান্তি আর হতাশা আর ছিল প্রশ্ন চিহ্ন, পারবো তো? আজ সেই যাত্রার ছয় বছর পূর্ণ হল। আজ তারা দেখতে পেয়েছে আলোর দিশা। তাদের সাথে পঁয়ত্রিশ জন সমব্যাথী পরিবারও সমান ভাবে এগিয়ে চলেছে তাদের বধির শিশুদের নিয়ে। তারাও আজ জানতে পেরেছে তাদের শিশুরাও পারবে অন্য পাঁচটা শিশুর মতো সমান ভাবে এগিয়ে যেতে।
যে শিশু বধিরতা নিয়ে জন্মায় বা জন্মের ঠিক পরে অসুস্থতার কারণে স্বাভাবিক নিয়মে কথা বলতে পারে না, কেবল আকার, ইঙ্গিত বা ইশারার দ্বারা পরস্পরের ভাব বিনিময় করে। কিন্তু আমাদের অনেকের কাছেই হয়তো এটা অজানা যে, শিশু অবস্থা থেকে বিশেষতঃ এক থেকে দুই বছর বয়সের মধ্যেই বা তারও আগে যদি শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র ব্যবহার করে কথা শেখানোর কাজ শুরু করানো যায় তাহলে নিশ্চয়ই সেই শিশু আমার আপনার মতো স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলবে। যদিও এই সাধারণ সত্য কথা বলা যত সহজ বাস্তবায়িত করা ততই কঠিন। আর তার জন্য চাই কঠোর প্রচেষ্টা আর মনোবল। অণ্বেষার যাত্রা শুরু এখন থেকেই।
অণ্বেষা হল একটি পরিবার, যে পরিবারের প্রতিটি শিশুই বধির অর্থাৎ শুনতে পায় না বা শুনলেও খুব কম শোনে। এই বধিরতাযুক্ত শিশুদের কথা শেখানো থেকে শুরু করে তাদের পড়াশুনো এমনকি মানসিক বিকাশের জন্য যে বিশেষ প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে অণ্বেষা সেই রাস্তা দেখায়। সেই চলার পথে অনেক বাধা। অণ্বেষা সেই পথ কে এত সহজ ভাবে নিয়ে যেতে সাহায্য করে যে মনেই হয় না, সেই পথ এতো দুরূহ। শিশুদের বাবা ও মায়েরা পরস্পরের সুবিধা অসুবিধাগুলো আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজে পায়। সমাজের বধিরতাযুক্ত শিশুদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস উত্তরোত্তর বৃদ্বি পাবে আর উজ্জ্বল হয়ে উঠবে অণ্বেষার নাম।
সূত্র: অন্বেষণ ২০১১ বার্ষিক জন সচেতনা প্রোগ্র্যাম স্যুভেনির থেকে সগৃহীত
No comments:
Post a Comment