কি ভাবে আপনি আপনার শিশুর মধ্যে বিস্ময় ও আনন্দ অনুভূতি বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন - সেই বিষয়ে এই ছোট্ট প্রতিবেদন।
প্রত্যেক শিশুর মধ্যে এক অপার বিস্ময়, নিষ্পাপবোধ ও আনন্দ অনুভূতি থাকে। আমরা বর্তমানে উন্নত জীবন যাপনে অভ্যস্ত, নিদারুণ ব্যস্ততায় দিনের পর দিন কাটাই। এই রকম আপাত জটিলতাময় বিশ্বে, শিশুদের মধ্যে থাকা এই উপরোক্ত অনুভুতিগুলি বজায় রাখা একজন অভিভাবকের পক্ষে বেশ চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। তবে সৌভাগ্যবশত, এই বিষয়ের উপর কাজটা করা খুব শক্ত নয়। বরং কতগুলো অতি সহজ, দ্রুত পদ্ধতি রয়েছে, সেটা সঠিক সময়ে নিয়ম করে প্রয়োগ করতে পারলেই শিশুর জীবনে একটা ভালো পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে,তাদের এই অনাবিল আনন্দ- বিস্ময় অনুভূতিকে বজায় রেখে।
টিপস
1. শিশুর সঙ্গে খেলা
আমরা প্রত্যেকেই যান্ত্রিক জীবনে সড়গড় হয়ে পড়েছি। প্রতিনিয়ত লাভ ক্ষতির হিসেব নিকেশ, আর্থিক অবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে আমাদের চিন্তাভাবনা মগ্ন রয়েছে কিন্তু একটি শিশুর জন্য সময় ব্যয় করার কথা ভাবি না। দৈনন্দিন ব্যস্ততার মধ্যে থেকে আপনি যতটা পারেন আপনার শিশুর সাথে খেলার জন্য নির্দিষ্ট সময় বের করুন, চেষ্টা করুন তার খেলার সাথী হয়ে ওঠা।
2। শিশুকে প্রকৃতি চেনানো
প্রকৃতির সাথে নিজেকে আত্মস্থ করার শিশুর স্বাভাবিক প্রবণতা আছে। খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটার আনন্দ বা পাখির বাসা খুঁজে বের করার মজা সেটা শিশুকে বলার জন্য দরকার পড়ে না, কিন্তু তারা চায় এই কাজে আপনার থেকে সময়, উপস্থিতি আর সাহচর্য। নিজের পাড়ায় শিশুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন, গাছ গাছালি চেনান, বাড়ির বাইরে পাখির জন্য খাবার জল রাখুন, নিয়মিত ব্যবধানে চিড়িয়াখানায় বা সংগ্রহালয়ে শিশুকে নিয়ে যান। এই ভাবে ছোট ছোট কাজের মধ্যে শিশু আনন্দ পাবে, প্রকৃতির প্রতি তার ভালবাসা গড়ে উঠবে। প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ আপনার শিশুর মধ্যে বৌদ্ধিক, মানসিক, সামাজিক ও শারীরিক বিকাশ বিকাশে অনন্য ভূমিকা নিতে পারে।
3। শিশুকে নিয়ে গল্প পড়ুন
প্রথম থেকেই শিশু সাহিত্য কিন্তু অনবদ্য ভূমিকা পালন করে চলেছে - শিশুর সৃজন ও কল্পনা শক্তির উৎস হিসাবে।একটা ভালো বই একজন শিশুকে সন্দেহ দূরীকরণে, পৃথিবীকে নতুন ভাবে দেখতে, নানান চরিত্রকে জানতে প্রভূত ভাবে সাহায্য করে। বাড়িতে একসাথে পড়ার অভ্যাস চালু করুন। নানান ছবি রয়েছে এমন বই পড়ুন বা পড়ান শিশুর যাতে বিজ্ঞান, ইতিহাস ও প্রকৃতির প্রতি জানার আগ্রহ বাড়ে। শিশুদের কবিতা বই পড়ুন - এতে ভাষার মাধুর্য, রূপক বা শব্দের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা গড়ে উঠবে। ভালো সাহিত্য একজন শিশুর কল্পনাশক্তিকে বাড়িয়ে দেয়, গভীর ভাবে ভাবনাশক্তিকে উৎসাহিত করে ও বৌদ্ধিক বিকাশে মুখ্য ভূমিকা নেয়।
4। প্রযুক্তির ব্যবহারে সীমিত থাকা
নতুন কিছু জানা, বা প্রশ্নের উত্তর পেতে প্রযুক্তির জুড়ি মেলা ভার। নির্বাচিত উপযুক্ত সিনেমাও শিশুর মধ্যে বিস্ময় ও আনন্দ অনুভূতি সৃষ্টিতে সক্ষম। কিন্তু অতিরিক্ত প্রযুক্তির ব্যবহার বা অতি নির্ভরতা শিশুর পক্ষে ভালো নয়, তার কল্পনাশক্তির হ্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অতি সংবেদনশীল খবর, প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য খবর বা মনোরঞ্জক সিনেমা শিশুদের মনে কুপ্রভাব পড়তে পারে।
5। সৌন্দর্য বোধের বিকাশ
রোজকার ধরাবাঁধা রুটিন আমাদের বিভিন্ন কাজকে সুসম্পন্ন করতে সাহায্য করে, শিশুকে নিরাপদে রাখতেও কার্যকরী ভূমিকা নেয়। কিন্তু তার সাথে আমরা এমন রুটিন তৈরি করতে পারি যাতে একজন শিশুর মধ্যে সৌন্দর্য, বিস্ময় ও শান্তি বোধের বিকাশ হয়। যেমন, মোমবাতি জ্বালানো, রাত্রে খাওয়ার সময় সুন্দর গান শোনা, শুতে যাওয়ার আগে 10 মিনিট নানা রকমের গল্প বলার মধ্যে দিয়েও শিশুদের মনে ছোট ছোট আনন্দের মুহূর্ত তৈরি হয়। এটি কিন্তু শিশুর মনের মধ্যে দারুণ প্রভাব ফেলে।
আনন্দ ও বিস্ময় অনুভুতি একজন শিশুর কাছে শুধু বিলাসিতা নয়, খুব প্রয়োজনীয় জিনিস। ছোট ছোট আনন্দের মুহূর্ত, বিস্ময় অনুভূতি কিন্তু শিশুকে এই জটিল পৃথিবীতে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বেঁচে থাকার শিক্ষা দেয়, ভবিষ্যতে জীবনে চলার পথে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার সাহস ও আত্মবিশ্বাস যোগায়।
সূত্র:
https://www.brighthorizons.com/family-resources/fostering-sense-of-wonder-and-joy-in-children
প্রত্যেক শিশুর মধ্যে এক অপার বিস্ময়, নিষ্পাপবোধ ও আনন্দ অনুভূতি থাকে। আমরা বর্তমানে উন্নত জীবন যাপনে অভ্যস্ত, নিদারুণ ব্যস্ততায় দিনের পর দিন কাটাই। এই রকম আপাত জটিলতাময় বিশ্বে, শিশুদের মধ্যে থাকা এই উপরোক্ত অনুভুতিগুলি বজায় রাখা একজন অভিভাবকের পক্ষে বেশ চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। তবে সৌভাগ্যবশত, এই বিষয়ের উপর কাজটা করা খুব শক্ত নয়। বরং কতগুলো অতি সহজ, দ্রুত পদ্ধতি রয়েছে, সেটা সঠিক সময়ে নিয়ম করে প্রয়োগ করতে পারলেই শিশুর জীবনে একটা ভালো পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে,তাদের এই অনাবিল আনন্দ- বিস্ময় অনুভূতিকে বজায় রেখে।
টিপস
1. শিশুর সঙ্গে খেলা
আমরা প্রত্যেকেই যান্ত্রিক জীবনে সড়গড় হয়ে পড়েছি। প্রতিনিয়ত লাভ ক্ষতির হিসেব নিকেশ, আর্থিক অবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে আমাদের চিন্তাভাবনা মগ্ন রয়েছে কিন্তু একটি শিশুর জন্য সময় ব্যয় করার কথা ভাবি না। দৈনন্দিন ব্যস্ততার মধ্যে থেকে আপনি যতটা পারেন আপনার শিশুর সাথে খেলার জন্য নির্দিষ্ট সময় বের করুন, চেষ্টা করুন তার খেলার সাথী হয়ে ওঠা।
2। শিশুকে প্রকৃতি চেনানো
প্রকৃতির সাথে নিজেকে আত্মস্থ করার শিশুর স্বাভাবিক প্রবণতা আছে। খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটার আনন্দ বা পাখির বাসা খুঁজে বের করার মজা সেটা শিশুকে বলার জন্য দরকার পড়ে না, কিন্তু তারা চায় এই কাজে আপনার থেকে সময়, উপস্থিতি আর সাহচর্য। নিজের পাড়ায় শিশুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন, গাছ গাছালি চেনান, বাড়ির বাইরে পাখির জন্য খাবার জল রাখুন, নিয়মিত ব্যবধানে চিড়িয়াখানায় বা সংগ্রহালয়ে শিশুকে নিয়ে যান। এই ভাবে ছোট ছোট কাজের মধ্যে শিশু আনন্দ পাবে, প্রকৃতির প্রতি তার ভালবাসা গড়ে উঠবে। প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ আপনার শিশুর মধ্যে বৌদ্ধিক, মানসিক, সামাজিক ও শারীরিক বিকাশ বিকাশে অনন্য ভূমিকা নিতে পারে।
3। শিশুকে নিয়ে গল্প পড়ুন
প্রথম থেকেই শিশু সাহিত্য কিন্তু অনবদ্য ভূমিকা পালন করে চলেছে - শিশুর সৃজন ও কল্পনা শক্তির উৎস হিসাবে।একটা ভালো বই একজন শিশুকে সন্দেহ দূরীকরণে, পৃথিবীকে নতুন ভাবে দেখতে, নানান চরিত্রকে জানতে প্রভূত ভাবে সাহায্য করে। বাড়িতে একসাথে পড়ার অভ্যাস চালু করুন। নানান ছবি রয়েছে এমন বই পড়ুন বা পড়ান শিশুর যাতে বিজ্ঞান, ইতিহাস ও প্রকৃতির প্রতি জানার আগ্রহ বাড়ে। শিশুদের কবিতা বই পড়ুন - এতে ভাষার মাধুর্য, রূপক বা শব্দের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা গড়ে উঠবে। ভালো সাহিত্য একজন শিশুর কল্পনাশক্তিকে বাড়িয়ে দেয়, গভীর ভাবে ভাবনাশক্তিকে উৎসাহিত করে ও বৌদ্ধিক বিকাশে মুখ্য ভূমিকা নেয়।
4। প্রযুক্তির ব্যবহারে সীমিত থাকা
নতুন কিছু জানা, বা প্রশ্নের উত্তর পেতে প্রযুক্তির জুড়ি মেলা ভার। নির্বাচিত উপযুক্ত সিনেমাও শিশুর মধ্যে বিস্ময় ও আনন্দ অনুভূতি সৃষ্টিতে সক্ষম। কিন্তু অতিরিক্ত প্রযুক্তির ব্যবহার বা অতি নির্ভরতা শিশুর পক্ষে ভালো নয়, তার কল্পনাশক্তির হ্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অতি সংবেদনশীল খবর, প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য খবর বা মনোরঞ্জক সিনেমা শিশুদের মনে কুপ্রভাব পড়তে পারে।
5। সৌন্দর্য বোধের বিকাশ
রোজকার ধরাবাঁধা রুটিন আমাদের বিভিন্ন কাজকে সুসম্পন্ন করতে সাহায্য করে, শিশুকে নিরাপদে রাখতেও কার্যকরী ভূমিকা নেয়। কিন্তু তার সাথে আমরা এমন রুটিন তৈরি করতে পারি যাতে একজন শিশুর মধ্যে সৌন্দর্য, বিস্ময় ও শান্তি বোধের বিকাশ হয়। যেমন, মোমবাতি জ্বালানো, রাত্রে খাওয়ার সময় সুন্দর গান শোনা, শুতে যাওয়ার আগে 10 মিনিট নানা রকমের গল্প বলার মধ্যে দিয়েও শিশুদের মনে ছোট ছোট আনন্দের মুহূর্ত তৈরি হয়। এটি কিন্তু শিশুর মনের মধ্যে দারুণ প্রভাব ফেলে।
আনন্দ ও বিস্ময় অনুভুতি একজন শিশুর কাছে শুধু বিলাসিতা নয়, খুব প্রয়োজনীয় জিনিস। ছোট ছোট আনন্দের মুহূর্ত, বিস্ময় অনুভূতি কিন্তু শিশুকে এই জটিল পৃথিবীতে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বেঁচে থাকার শিক্ষা দেয়, ভবিষ্যতে জীবনে চলার পথে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার সাহস ও আত্মবিশ্বাস যোগায়।
সূত্র:
https://www.brighthorizons.com/family-resources/fostering-sense-of-wonder-and-joy-in-children
No comments:
Post a Comment