Monday, September 5, 2016

Anwesha: Aamar Katha by Anurupa Ghosh

আমার কথা
অনুরূপা  ঘোষ
আমার ছোটবেলার কথা আমি  বাবা ও মার কাছে শুনেছি যে আমার যখন আড়াই বছর বয়স তখনও আমি কথা বলতে পারতাম না, তখন ডাক্তারের কাছে বাবা ও মা যান এবং বেরা টেস্ট করে জানতে পারেন যে আমি কানে শুনতে পাই না, আমি একজন শ্রবণ  প্রতিবন্ধী।  তখন আমার মা ও বাবা খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলেন যে তাদের মেয়ে কথা বলতে পারবে না, জীবনে পড়াশুনো করতে পারবে না তবে আমার মা ও বাবা ভেঙে না পড়ে লড়াই শুরু করেন। প্রথমে স্পেশাল স্কুলে এক বছর পড়েছি, তারপর সাধারণ স্কুলে পড়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছি এবং  যাদবপুর  বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি নিয়ে স্নাতক হয়েছি। এখন আমি কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারী। রাজ্য  বিমা নিগমে  (Employees State Insurance Corporation) চাকরি করি।

আমি যখন স্কুলে পড়ি তখন ক্লাসে সব পড়া বুঝতে পারতাম না ও খুব অসুবিধা হতো পড়া বুঝতে। এই ভাবে বেশির ভাগ সময় পড়ায় পিছিয়ে যেতাম। শিক্ষক ,শিক্ষিকা ও সহপাঠীদের কাছ থেকে  সাহায্য চাইতাম পড়া বোঝানোর জন্য। মাঝে মাঝে সময় থাকলে থাকলে তারা পড়া বুঝিয়ে দিত।  তবুও কিছু কিছু পড়া বুঝতে না পেরে পিছিয়ে পড়তাম, এই ভাবে আমার মনের মতো খুব  ভালো রেজাল্ট করতে পারতাম না।  তারপর  যখন কলেজে পড়তাম তখন আরো অসুবিধা হতো পড়া বুঝতে কারণ ইংরেজীতে পড়ানো হতো।  কিন্তু খুব চেষ্টা করতাম পড়া বোঝার তবু সেই রকম সাফল্য হতো না।  যখন বনধুরা ও আত্মীয়-স্বজনেরা গল্প করে একসাথে আড্ডা মারে তখন আমি  অনেক কথা বুঝতে পারি না , নিজেকে একলা একলা অনুভব করি ও ভালো লাগে না। তারপর যারা বাংলায় বলতে পারে না তাদের কথা বুঝতে পারি না।  ছোটবেলায় যখন আমি কথা বুঝতে পারতাম না  ও লোকেরা আমার কথা বুঝতে পারতো না তখন আমি একা  হয়ে যেতাম ও খুব দুঃখ পেতাম। এর ফলে লোকের সাথে মিশতে চাইলেও মিশতে পারতাম না।  ফোনে সব সময় ভালো করে বুঝতে পারি না। 

এই অবস্থায় আমি যখন অন্বেষায় এলাম, দেখলাম যে আমার মত অনেক শ্রবণ সমস্যাযুক্ত  ছেলেমেয়েরা অনেক কষ্ট করে পড়াশুনো করে বড়ো হয়েছে। তারপর আমরা কিছু বনধুরা এক জায়গায় হই ,  আলোচনা করে বুঝতে পারলাম আমাদের যাদের শোনার অসুবিধা আছে আমরা "সিঙ্গল ল্যাংগুয়েজ (Single Language)" নিয়ে advocacy করলে হয়তো এই অসুবিধাটা আমাদের মতো ছোট বনধু , ভাই বোনেদের হবে না। এই ভাবে আমরা   “BONDHU Group “ তৈরী করি। আমরা ৯ই নভেম্বর ২০১৩ তে বিকাশ ভবনে শিক্ষা বিষয়ক সমস্ত আধিকারিকদের সাথে আলোচনা করি। 

তারা আমাদের তথ্যের উপর ভিত্তি করে সিঙ্গল  ল্যাঙ্গুয়েজে  স্কুলগুলিতে চালু করে।  এই রকম আরও কাজ “BONDHU Group” থেকে আশা করি। যদিও আমাদের লড়াইয়ের শেষ নেই, এখনও  লড়াই  চালিয়ে যেতে হবে,তবে আমি আমার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি  যে প্রতিবন্ধকতা মানুষকে আরো আত্ম বিশ্বাসী ও স্বাবলম্বী হওয়ার জেদ বাড়িয়ে দেয়।   
          
সূত্র : অন্বেষণ ২০১৩ বার্ষিক জন সচেতনা  প্রোগ্রাম স্যুভেনির থেকে সঙ্কলিত


No comments:

Post a Comment