Tuesday, September 6, 2016

Anwesha: Hearing impairment and its remedy by Ms.Susmita Das


শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা ও তার প্রতিকার

শ্রীমতী সুস্মিতা  দাস


“শ্রবণ প্রতিবন্ধী” শব্দটির ব্যবহার আধুনিক। পূর্বে এমনকি এখনও  অনেকে শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের বোবা,কালা বা হাবা -গোবা এই শব্দ দিয়েই চিন্থিত করে।  শ্রবণ প্রতিবন্ধী তারাই যাদের শ্রবণ ক্ষমতা  অতি সামান্য থেকে মাধ্যম বা অতিমাত্রা পর্যন্ত নষ্ট হয়েছে। এই কথা গুলি বোঝার জন্য  একটু বিশদে যাওয়ার  প্রয়োজন। শব্দের প্রাবল্যকে ডেসিবেল ( db ) দ্বারা চিন্থিত  করা হয়। 

ক) যে সকল ব্যক্তির শ্রবণ ক্ষমতা ০ থেকে ২৫ db পর্যন্ত তারা শ্রবণে "সক্ষম"

খ ) যে সকল ব্যক্তির শ্রবণ ক্ষমতা ২৬ থেকে ৪৯ db পর্যন্ত, তারা "স্বল্প (Mild) মাত্রায়" শ্রবণ প্রতিবন্ধী

গ ) যে সকল ব্যক্তির শ্রবণ ক্ষমতা ৫০ থেকে ৬৯ db পর্যন্ত শ্রবণে ক্ষমতা আছে তারা “মধ্যম ( Moderate ) মাত্রায়” শ্রবণ অক্ষম

ঘ ) যে সকল ব্যক্তির শ্রবণ ক্ষমতা ৭০ থেকে ৮৯ db পর্যন্ত তারা “গুরুতর (Severe) মাত্রার” শ্রবণ প্রতিবন্ধী এবং

ঞ) ৯০ db -র  উপর যাদের  শ্রবণ অক্ষমতা আছে তারা  অতি গুরুতর (Profound) মাত্রার” শ্রবণ প্রতিবন্ধী।

এই শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার বহু কারণ  থাকতে পারে। যা তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় -

১) জন্মপূর্ব কারণ : শিশুর জন্ম পূর্বের যে কারণ গুলি বধিরতার জন্যে দায়ী তা হলো বংশগত বা জিনগত।   রুবেলা  সংক্রমণ, ভাইরাস আক্রমণ, হার্পিস সংক্রমণ, সিনড্রোম সমূহ, পিতা ও মাতার রক্তের (Rh) শ্রেণীর অসামঞ্জস্যতা।

২) জন্মকালীন কারণ: অপরিণত শিশুর জন্ম, জন্ম কালীন শ্বাসকষ্ট, নব জাতকের জন্ডিস

৩) জন্মপরবর্তী কারণ: ভাইরাসের দ্বারা সংক্রমণ, ওষুধের  পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, কানের ময়লা বা সেরুমেন, মধ্য কর্ণের সমস্যা, শব্দ দূষণ, কানের পুঁজ , কানের বাইরের পদার্থের প্রবেশ। এই  সমস্ত গুলি হলো technological কিছু কথা।   এই  অক্ষমতাকে বুঝতে হলে জানতে হবে এদের সঠিক সমস্যা, যা বাইরে থেকে  বোঝা এক প্রকার অসম্ভব। 

একটি শ্রবণ  প্রতিবন্ধকতাযুক্ত শিশু বা ব্যক্তি যদি বোধগম্য ভাষার দক্ষতা অর্জন করতে না পারে  তবে সমাজে সে হাবা - গোবা বোবা এমনকি কখনো কখনো মানসিক প্রতিবন্ধী বলেও বিবেচিত হয়। শ্রবণ অক্ষমতাযুক্ত শিশু বা ব্যক্তির সমস্যাগুলি বিভিন্ন ধরণের।  ভারতবর্ষের নিরিখে যদি এই সমস্যাগুলি বিবেচনা করি তাহলে প্রথমেই আসে আর্থ -সামাজিক ব্যবস্থা, তারপর শিক্ষা এবং  সর্বোপরি সঠিক পুর্নবাসন। আমরা মনে করি একটি শিশুর সার্বিক  বৃদ্বির জন্য তার পরিবারের ভূমিকা অসীম। যে পরিবারে তার মা, বাবা, ভাই বোন, আত্মীয় স্বজন  সঠিক ভাবে শিশুটিকে সাহায্য করে সেই শিশুই  ভবিষতে এক দক্ষ নাগরিক হিসেবে বেড়ে ওঠে। আর এটাও পরীক্ষিত যে মানুষের কথা বলার দক্ষতা  জন্মগত নয় , জন্মের পরে স্বাভাবিক শ্রবণ সাহায্যে পরিবেশে ব্যবহুত ভাষা শুনতে শুনতে সে কথ্য ভাষা আয়ত্ত করে। কিন্ত একটি পরিবারের  প্রত্যেকেই যদি রুটি রোজগারের জন্যে ব্যস্ত থাকতে হয়, তবে শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুটির প্রয়োজনীয় সহায়তা হয়তো সঠিক ভাবে দেওয়া সম্ভব হয় নাআবার  আবার অপর পক্ষে ওই পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র কিনে শিশুটিকে স্বাভাবিক কথা শোনানোও অসম্ভব হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে শিশুটির বিকাশে এই আর্থিক কারণই  হলো প্রধান সমস্যা।

একটি শিশুর যদি ভাষা শিক্ষা  বা ভাষার দক্ষতা সঠিক বয়সে সঠিক মাত্রায় না হয় তবে তার যোগাযোগ এবং শিক্ষায় নানান সমস্যা দেখা দেয়। যে ভারতবর্ষ বিশ্বের অনেক দেশকে সভ্যতার ও সংস্কৃতির আলো দেখিয়েছে  সেই ভারতবর্ষের  শিক্ষার ইতিহাসে বধির শিক্ষার নির্দর্শন কিনতু বিশেষ খুঁজে পাওয়া যায় না। এর পরের সমস্যা আরো গুরুতর, তা হলো সরকারি বা বেসরকারি ক্ষেত্রে এই শ্রবণ অক্ষম শিশুদের সঠিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থার অপ্রতুলতা। ভারতবর্ষে প্রতিবন্ধকতাযুক্ত  মানুষের জন্য প্রণীত আইন দ্বারা এই শ্রবণ অক্ষম শিশুদের কিছু ক্ষমতা বা অধিকারকে কার্যকরী করে তোলা হয়েছে তবে তা শুধু খাতায় কলমেই থেকে গেছে বিশেষ বাস্তবায়িত হচ্ছে না।

এই সকল সমস্যা যুক্ত শ্রবণ অক্ষম শিশু বা ব্যক্তি কেও কিন্তু সঠিক প্রথাগত কিছু নিয়মের মধ্যে দিয়ে নিয়ে গিয়ে সাফল্যের পথে এগিয়ে দেওয়া যায়  তার বেশ কিছু নির্দর্শন আমরা আমাদের সমাজকে এখন দেখাতে পারছি। যদি একটি শ্রবণ অক্ষম শিশুর  খুব অল্প বয়সে শ্রবণ অক্ষমতার মাত্রা নিরূপণ করা যায় এবং সঠিক শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র (Hearing Aid) ব্যবহার করান যায় তবে প্রথম প্রতিকারমূলক পদক্ষেপটি কার্যকরী হবে।  এরপর শুরু হবে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শিশুটিকে কথা শোনানো অর্থাৎ মা, বাবা, আত্মীয় স্বজন যেভাবে স্বাভাবিক কথোপকথন চালান একটু বেশি মাত্রায় শিশুটির সাথেও তাই করতে হবে।  এই হলো দ্বিতীয় প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ।  এর সাথে চলতে থাকবে সামাজিকীকরণ। প্রতিবেশী শিশু ও সমবয়সী শিশু, আত্মীয় স্বজনের সাথে স্বাভাবিক ভাবে  মেলামেশা করানো ও খেলাধুলায় অংশ গ্রহণ করানো। প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে তাকে নিয়ে আসতে  হবে। এই  নিয়ম গুলির মধ্যে সবচেয়ে জরুরি হলো সঠিক সময়ে শ্রবণ অক্ষমতা নিরূপণ এবং সঠিক শ্রবণ সহায়ক যন্ত্রের ব্যবহার। শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র হলো একটি শব্দ বিবর্তক যন্ত্র। যা মূলত এই শ্রবণ অক্ষম শিশুদের শ্রবণে সহায়তা  করে।  একথা পরীক্ষিত ভাবে প্রমাণিত যে বধির শিশুকে যদি যথাসময়ে এবং যথোপযুক্ত শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র ব্যবহার করানো এবং তার ভাষা বিকাশের উপযোগী সহায়তা  দেওয়া হয় তাহলে তা শ্রবণে অসুবিধাগ্রস্ত শিশুর জীবন সাধারণ শ্রবণক্ষম শিশুর মতোই হয়ে উঠবে।

কিন্তু দুঃখের বিষয় এর পাশে পাশেই পূর্বে আলোচিত আর্থ  সামাজিক কারণে বহু শ্রবণ অক্ষম শিশুর পরিবার এই শ্রবণ সহায়ক যন্ত্রের সাহায্য নিতে পারে না , সে ক্ষেত্রে শিশুটির ভাষার বিকাশ না হওয়ায় সে পিছিয়ে পড়ে।  আর সকলের মত করে বড়ো হয়ে উঠতে  পারে না।  জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে সে বিদ্রুপ অরে শোষণের শিকার হতে পারে। ফলে মানসিক ভাবেও সে পিছিয়ে পড়ে। যদিও এই শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুরা একটি  বিশেষ পদ্ধতিতে অর্থাৎ সাইন ল্যাংগুয়েজের মাধ্যমে ভাষা শিক্ষা ও নিজেদের ভাব প্রকাশ করতে পারে। আমরা এমন সমাজে বাস করি যেখানে আমাদের মতো অপরজন না হলেই তাকে ত্যাগ করার মানসিকতা চলে আসে। তাই ওই বিশেষ পদ্ধতিকে সমাজ কতখানি অগ্রাধিকার দেবে ও সেই শিশুকে সমাজ কতখানি আপন করে নেবে সেই বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকেই যায়। তাই শ্রবণ অক্ষম শিশুদের শ্রবণ সহায়ক যন্ত্রের ব্যবহার করানোই সর্বক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। সব শেষে এর সাথে সাথেই আমরা আশা করি যে উন্নয়্নশীল সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে এই  বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুটি বড়ো হচ্ছে সেই স্তরের, প্রতিটি মানুষের পূর্ণ সহযোগিতা শিশুদের সার্বিক অগ্রগতির দিকেই এগিয়ে নিয়ে যাবে।

ধন্যবাদ

এমনই  একটি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর মা -    


সূত্র : অন্বেষণ ২০০৮ বার্ষিক জন সচেতনা  প্রোগ্রাম স্যুভেনির থেকে সঙ্কলিত
               

1 comment:

  1. Great information, How can I book an appointment for Hearing Aid in Kolkata , also suggest me good quality brand.

    ReplyDelete