সব বাধা পেরিয়ে
মঞ্জুলা দাস
এই
সুন্দর পৃথিবীতে প্রতিটি নারী মা
হওয়ার মধ্যে দিয়ে নিজেকে সম্পূর্ণ করে
তোলে। আর যখন তার সন্তানের সন্তানের মুখ থেকে প্রথম "মা" ডাক শোনে,
মায়ের মন প্রাণ ভরে যায়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এই আনন্দে একটু বাধা
ছিল। কারণ আমার ছেলে বাবাই এর কানে শোনার অসুবিধা ছিল। তাই সঠিক সময়ে ও কোনো কথাই বলেনি। ছেলের এই অসুবিধার কথা যেদিন জানতে পারলাম
সেদিন সেই মুহূর্ত থেকে আমার পৃথিবীটা একেবারেই
বদলে গেলো। ছেলেকে নিয়ে আজ এখানে কাল সেখানে এভাবেই যে যে কত দিন কত জায়গায় ছুটেছি তা আজ আর মনে ভাবতেও
চাই না। সম্ভবত ২০১০ সালে অন্বেষার খোঁজ পাই,তখন বাবাই ক্লাস ওয়ানে সাধারণ স্কুলে
পড়ে। কিন্তু স্কুলে ভীষণ অসুবিধা
হচ্ছিল। ও স্কুলের সাথে তাল রেখে চলতে
পারছিল না। ভীষণভাবে ভাষার সমস্যা
হচ্ছিল। স্কুলওকে ওকে কোনো রকম সাহায্য তো করছিলোই না, উপরন্তু
ওকে কোনো স্পেশাল স্কুলে দেওয়ার জন্যে প্রধান শিক্ষক চাপ দিচ্ছিলেন। কানে শোনার অসুবিধা যুক্ত
শিশুদের সাধারণ স্কুলে পড়াশুনো করার জন্য সর্বশিক্ষা মিশনের সুনিৰ্দিষ্ট নিয়ম
থাকলেও স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহাশয় সে সব মানতে নারাজ।অগত্যা পাড়ার এক
অখ্যাত স্কুলে ওকে ভর্তি করতে বাধ্য
হই। শিক্ষিত সমাজের এই অমানবিক আচরণে
বাড়ির সবাই যখন মুঝড়ে পড়েছি, তখন অন্বেষার খোঁজ পাওয়া আমাদের কাছে ভগবানের
আশীর্বাদের মত।
অন্বেষায়
এসে এখানকার দিদিদের সাথে কথা বলে ও অন্যান্য মায়েদের সাথে কথা বলে জানতে পারি,
কানে কম শুনতে পাওয়া শিশুদের চেষ্টা করলে সমাজের মূল স্রোতে রাখা সম্ভব। সোমাদি,
সুস্মিতাদি যত্নসহকারে সহকারে বাবাই কে
নিয়ে কাজ শুরু করেন। অন্যান্য মায়েরা যেহেতু সমব্যাথী তাই তাদের সাথে কথা বলেও
উৎকণ্ঠা অনেকটা দূর হয়। ভাষার কিছু সমস্যা
থাকলেও বাবাই এবার সাধারণ স্কুলেই ক্লাস সিক্সের অ্যানুয়াল পরীক্ষা দিল। জানি চলার পথ সাধারণের মতো মসৃণ নয় কিন্তু এই পথ চলার জন্য অন্বেষার মতো
প্রতিষ্ঠানকে পাশে পেয়েছি বলে স্বপ্ন দেখি এই পথের শেষে হয়তো উজ্জ্বল এক ভবিষ্যত
আমার ছেলের জন্য অপেক্ষা করে আছে।
কানে
শোনার অসুবিধা যুক্ত শিশুদের সমস্যামুক্ত করতে এবং ওদের মুখে কথা ফোটানোর জন্য
অন্বেষার নিঃস্বার্থ এই সাধু প্রচেষ্টা
সার্থক হোক। অন্বেষার একটা নিজস্ব বাড়ি
হোক আর সেই বাড়ি এই শিশুদের কলকাকলিতে ভরে
থাকুক। আমাদের এই সন্তানরাও যে
কোনো কিছুতে পিছিয়ে থাকবে না , তারাও যে সমাজের মূল স্রোতে থাকার সমান অধিকারী এই
কথাটা সমাজকে বোঝানোর জন্যও অন্বেষা আরো কার্যকরী পদক্ষেপ নিক। সব বাধা পেরিয়ে অন্বেষা এগিয়ে চলুক। দীর্ঘজীবী হোক অন্বেষা।সর্বক্ষেত্রে জয়ী হোক
অন্বেষা,এই আমার একান্ত আন্তরিক কামনা।
ধন্যবাদ সূত্র : অন্বেষা ২০১৫ বার্ষিক জন সচেতনা প্রোগ্রাম স্যুভেনির থেকে সঙ্কলিত
No comments:
Post a Comment